Saturday, May 18, 2024
Homeবাংলারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী PDF | Rabindranath Tagore Biography

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী PDF | Rabindranath Tagore Biography

রবীন্দ্রনাথের সংক্ষিপ্ত জীবনী PDF

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী বিষয়ক পরিচয়, এ যেন মহামানবের এক কণার বর্ণনা। তার সাহিত্যকর্মের এত বিস্তার তা বর্ণনা করা যেন অসম্ভব। তবুও আমি এখানে তার অসীম জীবনধারার সামান্য কিছু সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করছি

রবীন্দ্রনাথের জীবনী

জন্ম৭ই মে ১৮৬১ [২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ]
জন্মস্থানজোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা
পিতা ও মাতাদেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবী
মৃত্যু৭ই আগস্ট ১৯৪১ [২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ]
সমাধিস্থলনিমতলা, কলকাতা
ছদ্মনামভানুসিংহ ঠাকুর, আন্নাকালী পাকড়াশী
পুরস্কারসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ১৯১৩

শিক্ষাজীবন: প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথের স্কুল জীবন শুরু হয় অরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে, কিন্তু অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের স্কুল জীবন শুরু হয় কলকাতার ট্রেনিং একাডেমিতে। বেঙ্গলি একাডেমি তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব বেশিদিন প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও  গুণগতমানের বিচারে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার থেকে অনেক বেশি এগিয়ে।

বিলেত যাত্রা: ১৮৭৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৭ বছর বয়সে বিলাতে যান ভর্তি হন লন্ডন স্কুলে। পরবর্তীকালে পিতার আদেশে বিলেত থেকে ফিরে আসেন।

জমিদারি দেখাশোনা: ১৮৮৫সালে পিতার আদেশে জমিদারি দেখার ভার নেন, এখানকার উন্মুক্ত প্রকৃতি ও  মানুষগুলো রবীন্দ্রনাথকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিলেন।

শিক্ষা বিস্তার ও দেশপ্রেম: মাত্র পাঁচ জন ছাত্র নিয়ে ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

সৃষ্টিকর্ম: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত কবি। তিনি আট বছর বয়সে তার কাব্য লেখালেখির কাজ শুরু করেন।তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা সংগীত স্রষ্টা হিসাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খন্ডে বিভক্ত। এছাড়াও সামগ্রিক চিঠিপত্র ১৯ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী মূলত “রবীন্দ্র নৃত্য”নামে পরিচিত।

ছোটগল্প: তিনি ৯৫ টি ছোট গল্প রচনা করেন। মূলত তিনি তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকা যেমন সাধনা, হিতবাদী, ভারতী এইসব পত্রিকার চাহিদা মেটাতেই ছোট গল্প রচনা শুরু করেন। এই গল্পগুলি উচ্চ সাহিত্য-মূল্য সম্পন্ন। তার বিশ্বমানের কয়েকটি ছোট গল্প হল- পোস্টমাস্টার, কাবুলিওয়ালা, শাস্তি, রবিবার, ল্যাবরেটরী, অতিথি, হৈমন্তী, দেনা-পাওনা, নষ্টনীড় ইত্যাদি।

উপন্যাস: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১৩টি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হল- গোরা(১৯১০), বউ ঠাকুরানীর হাট(১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি(১৯০৩), নৌকাডুবি(১৯০৬), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ(১৯১৬), শেষের কবিতা(১৯২৯)।

কাব্যগ্রন্থ: তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২ টি। সেগুলির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল-মানসী(১৮৯০), সোনার তরী(১৮৯৩), চিত্রা (১৯৯৬), চৈতালি (১৯৯৬), কথা ও কাহিনী(১৯০০), গীতাঞ্জলি(১৯১১), বলাকা(১৯১৬), প্রান্তিক(১৯৩৮), আরোগ্য(১৯৪০) ইত্যাদি।

নাট্যগ্রন্থ: বিসর্জন (১৮৯০), ডাকঘর(১৯১২), মুক্তধারা (১৯২২), কালের যাত্রা (১৯৩২), বৈকুণ্ঠের খাতা(১৮৯৭) ইত্যাদি।

কাব্যনাট্য: চিত্রাঙ্গদা, বিদায় অভিশাপ, মালিনী, কর্ণ কুন্তী সংবাদ, বাল্মিকী প্রতিভা, মায়ার খেলা ইত্যাদি।

প্রবন্ধ: তিনি ৩৬ টি প্রবন্ধ রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গুলি হল- ভারতবর্ষ (১৯০৬), সাহিত্য(১৯০৭), সমাজ(১৯০৮), সাহিত্যের পথে(১৯৩৬), কালান্তর(১৯৩৭), সাহিত্যের স্বরূপ ( ১৯৪৩), ইতিহাস(১৯৫৫) ইত্যাদি।

নাট্যসাহিত্য: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যভিনেতা। তিনি ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। কিছু উল্লখযোগ্য নাটক গুলি হল- শারদোৎসব(১৯০৮), রাজা(১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬), তাসের দেশ(১৯৩৩), কালের যাত্রা(১৯৩২) ইত্যাদি।

সঙ্গীত: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি গান রচনা করেছিলেন। ধ্রুপদী ভারতীয় সংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুর শৈলীর জন্ম দেয়। এই শৈলীটি “রবীন্দ্র সঙ্গীত” নামে পরিচিত। বহু কবিতাকে গানে রূপান্তরিত করেছিলেন। তা রচিত সকল গান সংকলিত আছে “গীতবিতান” নামক বইয়েতে । নিজে তার গানগুলি কে ৬টি পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন।
ছটি পর্যায়ের কিছু গান দেখে নেয়া যাক-
১) পূজা পর্যায়ের গান- আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
২) স্বদেশ পর্যায়ের গান- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, ও আমার দেশের মাটি, বাংলার মাটি, বাংলার জল।
৩) প্রেম পর্যায়ের গান -প্রাণ চায় চক্ষু না চায় ,মরি একি তোর দুস্তর লজ্জা।
৪) প্রকৃতি পর্যায়ের গান-আজ খেলা খেলবি আয়, এসো শ্যামলও সুন্দর।
৫) বিচিত্র পর্যায়ের গান-তোমার আছে ডাঙ্গা, আমার আছে জল ,তোমার বসে থাকা, আমার চলাচল।
৬)আনুষ্ঠানিক পর্যায়ের গান- জয় তব হোক জয়, জগতের পুরোহিত তুমি-তোমার এ জগৎ মাঝারে, এক চায় একেরে পাইতে, দুই চায় একেরে হইবারে।

চিত্রাঙ্কন: চিত্রাঙ্কনে কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ কাল পরিধিতে অঙ্কিত তার স্কেচ সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর, যার মধ্যে ১৫৭৪টি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত। ছবিতে দেখা যায়, মানুষের মুখের স্কেচ, অনির্ণেয় প্রাণীর আদল, নিসর্গ দৃশ্য ,ফুল, পাখি ইত্যাদি। নিজের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শেষ নিঃশ্বাস, বৌদ্ধ ভিক্ষুক

রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানসমূহ, স্মারক:
১) রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়,কলকাতা
২) বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বীরভূম
৩) শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, কুষ্টিয়া ,বাংলাদেশ
৪) রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
৫) রবীন্দ্র পুরস্কার
৬) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার
৭) রবীন্দ্র সদন
৮) রবীন্দ্র সেতু
৯) রবীন্দ্রনাথ সড়ক ,যশোর ,বাংলাদেশ
১০) রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

  • রবীন্দ্রনাথকে “কবিগুরু”, “গুরুদেব” ও “বিশ্বকবি” বলা হয়।
  • তার প্রথম প্রকাশিত রচনা ১৮৭৮ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত।
  • ১৮৭৮ সালে তার প্রথম বই “কবিকাহিনী” প্রকাশিত হয়।
  • ভিখারিনী গল্পটি ১৮৭৭ বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোট গল্প
  • রবীন্দ্রনাথের নিজের নামে প্রকাশিত প্রথম কবিতা হলো “হিন্দুমেলার উপহার”
  • গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদ “Song offerings” জন্য ১৯১৩ সালে প্রথম ভারতীয় ও প্রথম এশিয়ান হিসাবে নোবেল পুরস্কার পান।

উপসংহার: ১৯৪১ ৭ই আগস্ট রবীন্দ্রনাথের মহা প্রয়াণ ঘটে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তার সৃষ্টির মতো অমর, অক্ষয়, তার কবিতার মতোই তিনি আমাদের নয়ন সম্মুখে না থেকেও নয়ন মাঝখানে ঠাঁই নিয়েছেন, জীবন পথের চলার প্রতি মুহূর্তে আমরা তাকে অনুসরণ করি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent Posts

Most Popular