Saturday, July 27, 2024
Homeজিকেবাঁকুড়া জেলা সম্পর্কিত জিকে প্রশ্ন উত্তর | Bankura District GK in Bengali

বাঁকুড়া জেলা সম্পর্কিত জিকে প্রশ্ন উত্তর | Bankura District GK in Bengali

বাঁকুড়া জেলা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

বাঁকুড়া জেলা সম্পর্কিত জিকে প্রশ্ন উত্তর
বাঁকুড়া জেলা সম্পর্কিত জিকে প্রশ্ন উত্তর
আয়তন৬৮৮২ বর্গকিমি
জনসংখ্যা৩৫,৯৬,২৯২ জন
জনসংখ্যার ঘনত্ব৫২৩/বর্গকিমি
সাক্ষরতার হার৭০.৯৬%(২২,৩২,৯৯২ জন)
লিঙ্গ অনুপাত৯৫৪জন
প্রশাসনিক বিভাগমেদিনীপুর
সদর শহরবাঁকুড়া
লোকসভা কেন্দ্র২টি (বাঁকুড়া,বিষ্ণুপুর)
বিধানসভা আসন১২টি
গ্রাম পঞ্চায়েত১৯০টি
পৌরসভা
ব্লক২২
থানা২৩+২টি মহিলা থানা=২৫টি

বাঁকুড়া নামটির উৎপত্তি ও নামকরণের ইতিহাস:

বাঁকুড়া নামটি বাকুন্ডা শব্দের অপভ্রংশ, যার অর্থ পাঁচটি দীঘি। পুরাতন সরকারী নথিতে বাকুন্ডা নামটি পাওয়া যায়। স্থানীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী জেলা সদর বাঁকুড়া শহরের নামকরণ হয়েছে, এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা “বাঁকু রায়”এর নাম অনুসারে। স্থানীয়রা তাকে “বাঁকুড়া রায়” নামে ডাকেন।
             কোল মুন্ডা উপজাতিদের ভাষা অনুযায়ী “ওরা” বা “ড়া” শব্দের অর্থ “বসতি”। সংস্কৃত শব্দ বক্র থেকে “বাকু” শব্দের উদ্ভব। যার অর্থ আঁকাবাঁকা আবার সুন্দর অর্থেও “বাকু ” শব্দ ব্যবহার করা হয়। তাই বাঁকুড়া শব্দের অর্থ মনে করা হয়- “আঁকা বাঁকা বা উঁচু-নিচু বাসস্থান” বা” সুন্দর বাসস্থান”।

ভৌগলিক সীমানা: বাঁকুড়া জেলা হল মেদিনীপুর বিভাগের অন্তর্গত পাঁচটি জেলার একটি অন্যতম জেলা। এই জেলার উত্তরে ও পূর্বে বর্ধমান, দক্ষিণ পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ- পূর্ব হুগলি এবং পশ্চিমে পুরুলিয়া জেলা।

নদনদী: বাঁকুড়া জেলার প্রধান নদ গুলি হল -দামোদর, দ্বারকেশ্বর। নদী -শিলাই ও কংসাবতী, গন্ধেশ্বরী।

বাঁকুড়া জেলার ভাষাসমূহ: বাংলা, কুরমালী, সাঁওতালি, হিন্দি ও অন্যান্য।

কৃষিজ ফসল: এই জেলায় উৎপন্ন প্রধান ফসল কি হলো-ধান, গম , ডাল,তৈলবীজ, পাট ,আলু ,শুকনো লংকা ইত্যাদি দ্রব্য।

প্রধান শিল্প: এই জেলায় বৃহৎ আয়তনশিল্প না করে বললেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে জগৎ বিখ্যাত। বিষ্ণুপুরের বালুচড়ি শাড়ি বিখ্যাত, বাঁকুড়া সদর মহকুমা শুশুনিয়াতে পাথর কেটে দেব দেবীর মূর্তি ও থালা-বাসন তৈরি করা হয়, এছাড়াও পিতলের ডোকরা শিল্প জগত বিখ্যাত, এই জেলার সাংস্কৃতিক আইকন হলো ঘোড়া। হাতি ,ঘোড়া ও মনসার  তৈরি করার জন্য খুব বিখ্যাত।

খনিজ সম্পদ: বাঁকুড়া একটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ জেলা। এই জেলার উল্লেখযোগ্য সম্পদ গুলি হল-কয়লা, অভ্র, টাংস্টেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কলেজ -১৪টি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ-৫টি, মেডিকেল কলেজ-৫টি।

বাঁকুড়া জেলা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর

1) এই জেলা সদর শহরের  নাম কী?
উত্তর) বাঁকুড়া।

2) এই জেলা সদর শহরটি কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
উত্তর) দ্বারকেশ্বর।

3) নিজের আর প্রধান পাহাড় গুলির নাম কী?
উত্তর) শুশুনিয়া , বিহারীনাথ ও মশক (খাতরা)।

4) বাঁকুড়া জেলা কবে গঠিত হয়?
উত্তর) ১৮৮১ সালের ১৬ই মার্চ।

5) বাঁকুড়া জেলার প্রধান জাতীয় সড়ক কোনটি?
উত্তর) NH 314।

6) বাঁকুড়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর) শঙ্খ শিল্পটি বাঁকুড়া জেলায় খুব প্রসিদ্ধ। শাঁখারী নামে পরিচিত লোকেরা বিবাহিত মহিলাদের জন্য শাঁখা তৈরি করেন। এছাড়া ডোকরা শিল্প ও বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা শিল্প খুবই বিখ্যাত।

7) বাঁকুড়া জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম লেখো?
উত্তর) রামকিঙ্কর বেইজ, হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অটলবিহারী ঘোষ, হরনাথ ঠাকুর, যামিনী রায় প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

8) বাঁকুড়া জেলার  কিছু দর্শনীয় স্থানের নাম লেখো?
উত্তর) শুশুনিয়া, মুকুটমণিপুর, জয়রামবাটী, বিষ্ণুপুর, বিহারীনাথ পাহাড়।

9) “টুসু “কী?
উত্তর) পৌষ মাসের শেষের দিকে মুকুটমনিপুরে স্থানীয় লোকেরা একটি ফসল কাটার উৎসবকে টুসু উৎসব বলে।

10) ঝুমুর কী?
উত্তর) মাটিতে পরিবেশিত একটি উপজাতীয় নৃত্য।

11) করম উৎসব কী?
উত্তর) এটি মূলত ভাদ্র মাসের একাদশীতে পালিত হয় ও শিশুদের নিখুঁত চাষবাস ও আনন্দের জন্য সাজানো হয়।

12) ছৌ নৃত্য কী?
উত্তর) ছৌ  নাচ এই অঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত নাচ। স্থানীয় সম্প্রদায়ের পুরুষ নর্তকীরা তাদের উপর বিভিন্ন মুখোশ পরে এবং আখাদা নামে  পরিচিত খোলা জায়গায় নাচ করে।

বাঁকুড়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ

1) রামকিঙ্কর বেইজ: বিশিষ্ট ভারতীয় ভাস্কর ও চিত্রকর। তিনি আধুনিক ভারতীয় ভাস্করশৈলী ও আধুনিকতাবাদে অন্যতম পথপ্রদর্শক। শান্তিনিকেতনের বহু বিখ্যাত ভাস্কর্য তারই অমর।

2) হেমন্ত কুমার চট্টোপাধ্যায়: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ভারতীয়  স্বাধীনতা সংগ্রামী।

3) কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়: বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও শিক্ষিকা।

4) গডফ্রে ব্রাউন: বাঁকুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। একজন ব্রিটিশ অ্যাথলেট। ১৯৩৬ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে 4*400 মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক জয় করেন।

5) মোহম্মদ শামসুজ্জোহা: বাঁকুড়ায় জন্ম। এনাকে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

বাঁকুড়া জেলার প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন ক্ষেত্র

এই শহরের মনোমুগ্ধকর রূপের আড়ালে লুকিয়ে আছে শ্যামল সবুজ জঙ্গল ও পাহাড়, হস্তশিল্পের আধ্যাত্বিক বৈশিষ্ট্য ও টেরেকোটার গল্প।

জয়রামবাটী: পবিত্র মা শ্রী সারাদা দেবীর বাসস্থান হওয়ার কারণে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ভক্তদেরও মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত লাভ করে। গ্রামটিতে ছোট বড় অনেক মন্দির আছে, তবে সবথেকে জনপ্রিয় একটি মন্দির হলো পবিত্র মাকে উৎসর্গ করা শ্রী শ্রী মাতৃ মন্দির। গ্রামটিতে পবিত্র মায়ের জীবনে বেশ কয়েকটি কাহিনী প্রত্যক্ষ করেছে এবং এর ফলে শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদামনীর অনুগামীদের জন্য তীর্থযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

শুশুনিয়া পাহাড়: শুশুনিয়া পাহাড়ের উচ্চতা হল ১৪৭০ ফুট বা ৪৪৮মিটার। শুশুনিয়া পাহাড় হল বাঁকুড়া জেলার একটি বিখ্যাত স্থান যা রক ক্লাম্বিং এবং কিং এর মত খেলার সুযোগ প্রদান করে । এই পেলাটি নবীন ও অভিজ্ঞ পর্বত আরোহীদের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়। অমৃতপক্ষে দেশের অনেক নামি ও সফল পর্বত আরোহীরা এই পর্বতেই তাদের যাত্রা শুরু করেছেন । এই পাহাড় সূর্যোদয়ের একটি দর্শনীয় দৃশ্য প্রদান করে। পুরো শুশুনিয়া গ্রামটি পাথর খোদাইতে দুর্দান্তভাবে দক্ষ পুরস্কার বিজয়ী কারিগরদের ভান্ডার।

জয়পুর বন: জয়পুর বন হল বাঁকুড়া জেলায় অবশ্য একটি ঘন বন। এখানে আপনি দেখতে পাবেন যে ঘন ছাউনির মধ্যে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। শাল, সেগুন ,পলাশ ,মহুয়া প্রভৃতি গাছে জঙ্গল ভরে গেছে। এই জঙ্গলের অন্যতম প্রাণী হলো চিতল হরিণ। এছাড়াও হাতি, বন্য শিয়াল, নেকড়ে ও অন্যান্য পাখিও দেখা যায়।জয়পুরের কাছে পোড়ামাটির কাজ সমৃদ্ধ টেরাকোটা পঞ্চরত্ন মন্দির আছে।

মুকুটমণিপুর: মুকুটমণিপুর নামটি মুকুটের মত পাহাড়ের জন্য বলা হয়। এই মাটির বাঘ সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। দুটি নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত মুকুটমণিপুর “রাঙ্গামাটি”এর গলার আকৃতির হারের জন্য বিখ্যাত। নির্মল প্রকৃতি ও ও সবুজ বন ও টিলা দ্বারা গঠিত। মুকুটমণিপুর বাঁধকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী বাঁধ হিসেবে মনে করা হয়।

বিষ্ণুপুর: আদি মল্ল রাজারা মল্ল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন বিষ্ণুপুরে। জগৎ মল্ল তার রাজ্য বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেন। বাংলার পাথরের স্বল্প সমারোহের কারণে, পোড়ামাটির ইট একটি বিকল্প হিসেবে এসেছিল এবং বাংলার স্থপতিরা একটি সুন্দর কারুকার্যের একটি নতুন উপায় খুঁজে পায় যা “টেরেকোটা” নামে পরিচিত। সপ্তদশ শতকে পোড়ামাটির শিল্প শিখরে পৌঁছে ছিল। তাছাড়াও বিষ্ণুপুরের মন্দির বেঙ্গল টেম্পেল আর্কিটেকচার এর বিভিন্ন শৈলী অবলম্বন করে এবং এতে ঢালু ছাদ ও রত্ন বা চূড়া মন্দির উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

ঝিলিমিলি: ঝিলিমিলি হল পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার একটি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমন্বিত ট্যুরিস্ট স্পট। ইহা “দক্ষিণবঙ্গের দার্জিলিং” নামেও পরিচিত। কিছু জায়গায় এত ঘন বনের আচ্ছাদন যাতে প্রকাশ করতে পারে না। ঝিলিমিলিতে সবথেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো টুসুর উৎসব।

RELATED ARTICLES

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent Posts

Most Popular