আয়তন | ৩১৪৯ বর্গকিমি |
জনসংখ্যা | ৫৫ লক্ষ ১৯ হাজার ১৪৫ জন (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী) |
সাক্ষরতার হার | ৮২.৫৫ শতাংশ |
জনসংখ্যার ঘনত্ব | ১৬০১ প্রতি বর্গ কিমি |
মহকুমা | ৪টি (চুঁচুড়া সদর,চন্দননগর,শ্রীরামপুর,আরামবাগ) |
ব্লক | ১৮টি |
পৌরসভা | ১২টি |
থানা | ১৬টি |
গ্রাম পঞ্চায়েত | ২০৭ টি |
লোকসভা কেন্দ্র | ৩টি (হুগলি, শ্রীরামপুর,আরামবাগ) |
বিধানসভা কেন্দ্র | ১৮টি |
হুগলি নামটির উৎপত্তি ও নামকরণ:
এই জেলার নাম হুগলি হলো কিভাবে সেই প্রসঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেছেন। যেমন আমরা যদি ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে দেখি তাহলে দেখতে পাবো-ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের মতে, ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে পর্তুগিজ বণিকেরা সপ্তগ্রাম থেকে সরে এসে অধুনা হুগলি অঞ্চলে, তাদের পণ্য মজুত করার জন্য যে গুদাম বা গোলা তৈরি করেছিলেন, সেই” গোলা “শব্দ থেকেই “হুগলি “নামের উৎপত্তি।তিনি এও মনে করেন পর্তুগিজ দের মুখের ভাষায় যা “ও – গোলিম” বা “ও – গোলি ” বাঙালি উচ্চারণে তা হুগলি।
সপ্তদশ শতকের বিভিন্ন গ্রন্থে ও প্রথম ইংরেজ গভর্নর জেনারেলের ডায়েরীতে হুগলী বিভিন্ন নামে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন ওগোলি, ওগলি, হাগলে, গোলিন প্রভৃতি। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে ভাগীরথী নদীর তীরে প্রচুর হোগলা গাছ জন্মেছিল। সেই “হোগলা” থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়” হুগলি”।
প্রতিষ্ঠাকাল: বর্ধমানের দক্ষিণাঞ্চকে বিচ্ছিন্ন করে, ১৯৭৫ সালে ইংরেজরা প্রশাসনিক কারণে, হুগলি জেলা তৈরি করেছিলেন।
ভৌগলিক সীমানা: হুগলি জেলার পূর্বে উত্তর চব্বিশ পরগনা, উত্তর-পূর্বে নদীয়া, উত্তরে বর্ধমান, উত্তর -পশ্চিমে বাঁকুড়া, দক্ষিণে হাওড়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে পশ্চিম মেদিনীপুর ।
নদনদী: এই জেলার প্রধান নদী গুলি হল হুগলী, দ্বারকেশ্বর, দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী।
এছাড়াও রয়েছে সরস্বতী,কানা দামোদর প্রভৃতি ছোট ছোট নদী ও খাল। নদীগুলি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত।
উৎসব: চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো, মাহেশের রথযাত্রা, রাজা রামমোহন রায়ের মেলা, তারকেশ্বরে গাজন মেলা প্রভৃতি।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজা রামমোহন রায় প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ সংস্থা,রাজা রামমোহন রায় মহাবিদ্যালয়,হুগলী মহাসিন কলেজ,রাজা পিয়ারি মোহন কলেজ ,ওমেন্স পলিটেকনিক কলেজ।
হুগলি জেলা সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
১) পূর্বে হুগলি জেলা কোন জেলার অংশ ছিলো?
উত্তর) বর্ধমান জেলার
২) কত সালে হুগলি জেলা তৈরি হয়েছিলো?
উত্তর) ১৭৯৫ সালে।
৩) কত সালে হুগলি শহর ভারত সরকারের হাতে আসে?
উত্তর)১৯৫০সালের ২ রা মে।
৪) হুগলি জেলার কোন অংশে ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল?
উত্তর) চন্দননগরে।
৫) হুগলি জেলার কোন ওলন্দাজদের বাণিজ্য কুঠি ছিল?
উত্তর) চুঁচুড়াতে।
৬) হুগলি জেলার কোন অংশ পর্তুগিজদের বাণিজ্য কুঠি ছিল?
উত্তর) সপ্তগ্রাম, শ্রীরামপুর।
৭) হুগলি জেলার প্রধান প্রধান মহাসড়ক কী কী?
উত্তর) NH-২, NH-৬, GRAND TRUNK ROAD।
৮) হুগলি জেলার সদর শহরের নাম কী?
উত্তর) চুঁচুড়া।
৯) হুগলি জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম বলো?
উত্তর) রাজা রামমোহন রায়, নন্দলাল বসু, আশাপূর্ণা দেবী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মহিলাল মজুমদার গণপতি চক্রবর্তী মধুসূদন গুপ্ত ও শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
১০) হুগলি জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র গুলির নাম?
উত্তর) রাজা রামমোহন রায়ের বসতবাড়ি, ব্যান্ডেল চার্চ ,ইমামবাড়া ,হংসেশ্বরী মন্দির, কামারপুকুর, তারকেশ্বর শিব মন্দির, মাহেশের রথযাত্রা, রামকৃষ্ণ মঠ, ইটাচুনা রাজবাড়ী প্রভৃতি স্থান।
১১) হুগলি জেলার স্বাক্ষর জনসংখ্যার সংখ্যা কত?
উত্তর) ৩৩,৬৭,০৫২ জন।
১২) হুগলি জেলায় কয়টি পুরসভা আছে?
উত্তর) ১১টি।
১৩) হুগলি জেলার কয়েকটি প্রধান শিল্পের নাম?
উত্তর)পাট, মোটরগাড়ি তৈরি(হিন্দমোটর),টায়ার তৈরি(সাহাগঞ্জ),কাগজ কল , টিস্যু কাগজ(ত্রিবেণী),বস্ত্র শিল্প,ইস্পাত কারখানা,দুধ ও ঔষধ কারখানা, রেল ইঞ্জিন মেরামতির কারখানা ইত্যাদি।
১৪) হুগলি জেলার কতগুলো ক্ষুদ্র শিল্প আছে?
উত্তর) ২৪,৯৫৫ টি।
১৫) হুগলি জেলা দুধ উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কত অবস্থান দখল করে আছে?
উত্তর) তৃতীয়।
১৬)হুগলি জেলা ডিম উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কততম স্থান দখল করে আছে?
উত্তর) সপ্তম স্থান।
১৭) হুগলি জেলায় কতগুলো কারখানা আছে?
উত্তর) ৫৪৯ টি।
১৮) ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল কোনটি?
উত্তর) হুগলি শিল্পাঞ্চল।
১৯) হুগলি শিল্পাঞ্চলের সীমানা কতদূর বিস্তৃত?
উত্তর) হুগলি নদীর বামদিকে কল্যাণী থেকে বিরলাপুর, ও ডানদিকে ত্রিবেনী থেকে উলুবেরিয়া পর্যন্ত ১৩০০ বর্গ কিলোমিটার হুগলি শিল্পাঞ্চল এর অন্তর্গত।
২০) আরামবাগ কিসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর) মুরগির হ্যাচারি শিল্পের জন্য বিখ্যাত
হুগলি জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
রাজা রামমোহন রায়(১৭৭২-১৮৩৩): রাধানগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন আত্মীয় সভা ও ব্রাহ্মসভার প্রতিষ্ঠাতা ও বাঙালি দার্শনিক। তিনি সব থেকে বেশি বিখ্যাত হয়েছেন “সতীদাহ প্রথা” বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টার জন্য।তাকে” ভারতীয় রেনেসাঁর” বা “নবজাগরণের জনক” ও “ভারতের প্রমিথিউস”বলা হয়।
হাজী মুহাম্মদ মহসীন: তিনি হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন,ও একজন বিখ্যাত সমাজসেবী ছিলেন। বাংলার একজন জনহিতৈষী, দানবীর ও একজন শিক্ষানুরাগী ছিলেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: জন্ম দেবানন্দপুর গ্রামে। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত লেখক, ওপন্যাসিক ও গল্পকার। দেবদাস এনারি অমর সৃষ্টি।
নন্দলাল বসু: একজন বাঙালি চিত্রশিল্পী ছিলেন। বসু বিজ্ঞান মন্দিরে অলংকরণ করেন। তার নিখ্যাত শিল্প সৃষ্টি”পঞ্চপান্ডবের মহাপ্রস্থান” প্রত্যাবর্তন, উমর ব্যথা।
আশাপূর্ণা দেবী: প্রখ্যাত সাহিত্যিক। “প্রথম প্রতিশ্রুতি” ,”সুবর্ণলতা” প্রভৃতি আর বিখ্যাত গ্রন্থ।
মোহিতলাল মজুমদার: তিনি ছিলেন বিখ্যাত কবি ,প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য।
মধুসূদন গুপ্ত: বৈদ্যবাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অনুবাদক ও আয়ুর্বেদিক অনুশীলনকারী। তিনি ১৮৩৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রথম মানবব্যবচ্ছেদ করার জন্য কৃতিত্ব পায়।
গণপতি চক্রবর্তী: শ্রীরামপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাকে বাংলার “আধুনিক জাদু বিদ্যার পথিকৃৎ” বলে মনে করা হয়। তিনি পিসি সরকার ও কে লালের পরামর্শদাতা ছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব: তিনি হুগলি জেলার কামারপুকুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯ শতকের বাংলায় একজন হিন্দু মরমি ও ধর্মীয় সাধক।
হুগলি জেলার দর্শনীয় স্থান
ব্যান্ডেল চার্চ: ব্যান্ডের নামটি (“বান্দার “শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হল “বন্দর”। ব্যান্ডেলকে হুগলির বন্দর হিসাবে মনে করা হত। এটি পর্তুগিজ ও মোঘলদের সময়ের। পর্তুগিজদের একমাত্র ভরসা হলো চার্চ (বেসিলিকা) এবং মঠ।
হংসেশ্বরী মন্দির: এটি পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ সাত মন্দিরের মধ্যে এটি অন্যতম। মন্দির গুলির কাঠামোটি হলো” তন্ত্রিকসাত চক্রভেদের”প্রতিনিধিত্ব করে।
ইমামবাড়া: এটি হুগলির চুঁচুড়াতে অবস্থিত।এটি হলো একটি ইমামবাড়া ও মসজিদ।১৮৪১ হাজী মুহাম্মদ মহসিন এটি নির্মাণ করে।
তারকেশ্বর মন্দির: তারকেশ্বর মন্দির হল একটি প্রাচীন মন্দির । যেটি ভগবান শিবের উৎসর্গীকৃত।
মাহেশের রথযাত্রা: শ্রীরামপুরে মাইসের রথযাত্রা হলো পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রথযাত্রা ও বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা।
কামারপুকুর: কামারপুকুর হলো শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের জন্মস্থান।
ইটাচুনা রাজবাড়ী: এই রাজবাড়ী হল রাজকীয়তা ও ঐতিহ্যের নিদর্শন।
রাজা রামমোহন রায়ের বসতবাড়ি: রাজা রামমোহন রায়ের 250 তম জন্ম ও বর্ষপূর্তিতে হুগলির খানাকুলে অবস্থিত রামমোহন রায়ের জন্মস্থান ও তার বসত বাড়িটিকে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের তরফ থেকে “হেরিটেজ সাইট” হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
Howrah details din
Birbhum details din